সাম্প্রতিক বিশ্বসাহিত্য

এলিয়টের বেড়াল

অনেক বড় লেখকদের মনোযোগ কেড়েছিল বেড়াল নামক গৃহপালিত আদরের প্রাণীটি। অনেকের লেখার বিষয় হিসেবেও এসেছে: এডগার এ্যালেন পোর সেই বিখ্যাত গল্প Black Cat কার না মনে পড়বে! হোর্হে লুইস বোর্হেস-এরও আদরের প্রাণী ছিল বেপ্পো নামের এক বেড়াল। To Beppo নামে একটি কবিতাও লিখেছিলেন তিনি । কিন্তু এ যুগের প্রধান কবি টি এস এলিয়টও বেড়ালের প্রতি কৌতূহলী ছিলেন তা অজানা ছিল গত কয়েকদিন আগে পর্যন্তও। ১৯৬৪ সালে লেখা এলিয়টের এই কবিতাটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ইংল্যান্ডের Sunday Times পত্রিকায়। কবিতাটি পাওয়া গেছে এলিয়টের তরুণ বন্ধু এন্থনী লুড-এর, ২০০৩ সালে মৃত্যুর পরে, একটি বইয়ের ভেতরে। ২০০৬ সালে এটি ৯০০ পাউন্ডে ইবে (Ebay) তে বিক্রিও হয়েছিল। কবিতাটি ছিল অনুপ্রাস যুক্ত।

নতুনে ও পুরাতনে আমাজন

কাগজে মুদ্রিত বইয়ের যুগ শেষ হয়ে যাচ্ছে—এমন আশংকার কথা আমরা কয়েক বছর ধরেই শুনে আসছি। কিন্তু ঘটনা উল্টো: শেষ তো হয়ই নি, বরং বাড়ছে। যদি তাই না হতো তাহলে দেশে বিদেশে বিপুল সংখ্যক বই প্রকাশিত হচ্ছে কিভাবে? আমাজন যখন ২০ বছর আগে অনলাইন বইয়ের ব্যবসা শুরু করেছিল তখন অনেকেই মনে করেছিল রাস্তাঘাটে ও মার্কেটে যে বইয়ের দোকান ছিল তা বুঝি ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কারণ অনলাইনেই যদি বই বিক্রি করা যায় তাহলে কে আর দোকান ভাড়ার মতো বিপুল অংকের টাকা খোয়াতে চাইবে। অন্তত আমাজন যে সে কাজটি করবে না—এমন ধারণা ছিল সবারই। কিন্তু সবাইকে বিস্মিত করে দিয়ে বই বিক্রির সেই প্রাচীন প্রথায় ফিরে এসে আক্ষরিক অর্থেই দোকান খুলে বসেছে আমাজন। তবে বলে রাখি, তাই বলে ওরা কিন্তু অনলাইন মোটেই বর্জন করছে না।

রাউলিং নতুন কাজে ব্যস্ত

জে কে রাউলিং আজকাল প্রচন্ড ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। একদিকে চলছে হ্যারি পটারের থিয়েটার প্রডাকশন ‘দ্য কার্সড চাইল্ড’-এর কাজ। অন্যদিকে, রবার্ট গলব্রেইথ ছদ্মনামে প্রকাশ করলেন তাঁর রহস্য উপন্যাস সিরিজের তৃতীয় খন্ডটি ।

সর্বশেষ হ্যারি পটারের, ‘দ্য টেলস অব বিডল দ্য বার্ড’ মুক্তি পাবার আগ পর্যন্ত তাঁর শিশুদের জন্য কোনো উপন্যাস লেখা হয়ে ওঠেনি।

একটি রেডিও স্টেশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে, রাউলিং জানান তিনি আবারও শিশুদের জন্য বই লিখছেন। “আমার একটি ভাবনা ছিল বাচ্চাদের বইয়ের। সত্যি বলতে কি, আমি কিছু মজার অংশ লিখেও ফেলেছি, যা আমার নিজেরই ভীষণ পছন্দ হয়ে গেছে! তাই আমি অবশ্যই পুরোটা লিখে শেষ করব। এটি হবে আরেকটি শিশুতোষ গ্রন্থ।”

রাউলিং ঐ সময় করামোরান স্ট্রাক সিরিজের নতুন উপন্যাস ‘ক্যারিয়ার অব এভিল’ প্রচারণা অনুষ্ঠানের একটি প্রাতঃভোজ সভায় অংশ নিতে এসেছিলেন ।

রাউলিং এও বললেন, যে তিনি চেয়েছিলেন তার ছদ্মনামটি দীর্ঘদিন ধরে থাকুক। তবে একই সাথে শ্রোতাদের নিশ্চিত করলেন, তিনি তার তার আসল নামে আরও বেশি করে লিখবেন। কিন্তু কবে? উত্তরে রাউলিং জানান ‘আমি নির্দিষ্ট কোনো দিন ক্ষণ এখনই বলতে পারছি না, কারণ খুবই ব্যস্ত সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। এখন ‘ফ্যান্টাসটিক বিস্ট এন্ড হয়ার টু ফাইন্ড দেম’ নামে একটি চিত্রনাট্য লিখছি, যার মধ্য অনেক মজার ব্যাপার ও নাটকীয়তা আছে। তবে অবশ্যই আমি জে কে রাউলিং নামে একাধিক উপন্যাস লিখব। অনেক গল্পের প্লট আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।”

“মাঝে মাঝে আমার ভয় হয় যে,আমি এসব শেষ করার আগেই মরে যাব! আসলে এগুলি হল মধ্য জীবনের সংশয়- মনে হয় কিছু লিখে শেষ করবার আগেই আমি এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাব!”

“আমি সবসময় বলি ১৯ বছর পরে কী ঘটেছে সে সম্পর্কে আমার মাথার মধ্যে কখনও কিছু ছিল না। উপন্যাস হিসাবে ‘কার্সড চাইল্ড'(অভিশপ্ত শিশু) লেখা আমার ব্যক্তিগত কোনো ইচ্ছা ছিল না। নাটকটি দেখলেই সেটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।

গত মাসে মাত্র ৮ ঘণ্টায় এক লক্ষ পঁচাত্তর হাজার টিকিট বিক্রি হয়। বিক্রিত টিকিটের কিছু অংশ দালালরা দুহাজার দুশ পাউন্ডে পর্যন্ত বিক্রি করে। শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৩ বার টিকিট বিক্রির সময় বাড়ানো হয়। বর্তমানে ২০১৭ সালের ২৭ মে পর্যন্ত এর মেয়াদ রয়েছে।

এরমাঝেই রাউলিং বিবিসির সাথে আর তিনটি রহস্য উপন্যাসের নাট্যরূপ দেবার ব্যাপারেও কাজ শুরু করেছেন ।

অরওয়েলের নতুন কবিতা

বিশ শতকের বিশ্বসাহিত্যে সুপরিচিত একটি নাম জর্জ অরওয়েল। গদ্যের জন্যে, বিশেষ করে তার ‘এনিমেল ফার্ম’ আর ‘নাইনটিন এইটিফোর’ উপন্যাস দুটোর জন্য আমরা যাকে এখনো মনে করি, তার কবিতার জন্য ততটা করি না। এর অবশ্য যথেষ্ট কারণও আছে।

১৯৮৪ সালে এই লেখকের কবিতার প্রায় সব সংকলনই জনসাধারনের কাছে প্রকাশের উদ্দেশ্য বিক্রি করে দেয়া হয়। শুধুমাত্র অল্প কিছু ছাড়া। যে কবিতাগুলো নিয়ে সন্দেহ ছিল সেগুলো আসলে তার লেখার সাথে বেমানান।

সে লেখাগুলো এতদিন অরওয়েল সোসাইটির সদস্যদের কাছে রক্ষিত ছিল। কিন্তু আমাজন আর প্রকাশনা সংস্থা ওয়াটারস্টোনস-এর চাপে খুব শিঘ্রই সেগুলো ছোট সংকলন আকারে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে।

বইটির সম্পাদক ও জর্জ অরওয়েল সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা মিসেস ডিয়ন ভেনাবেলস বলতে গেলে মোটামুটি চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রায় এক বছর ধরে কাজ করে ৪২টি পদ্য একত্রিত করেছেন।

দ্য ইন্ডিপেনডেন্টকে তিনি বলেন, “মানের দিক থেকে খানিকটা ভিন্নতা থাকলেও সার্বিকভাবে পুরো সংকলনটার মাঝে বেশ আকর্ষণ আছে”।

তিনি একজন ভাল কবি বটে তবে ধ্রুপদী নন। তার কবিতাগুলো তার রাজনৈতিক লেখা এবং সাংবাদিকতার প্রতিভা বিচারে সংগতিপূর্ণ নয়। তবে একেবারে খারাপ বলবারও অবকাশ নেই। মোটামুটি গড়পড়তা কবিতা বলা যায়।

কবিতাগুলো একটু ভিন্ন স্বাদের। পাঠক এখানে অরওয়েলকে সমালোচনা করার সুযোগও পেয়ে যেতে পারেন। এখানে যেমন তার হাস্যকৌতুক করার দিকটি পাবেন তেমনি প্রেমের দিকটিও পাবেন। বিভিন্ন সময়ে তার মানসিক অবস্থা, স্বাস্থ্য, তার জীবনযাত্রা সম্পর্কে পাঠক একটি ধারণা পাবেন। অরওয়েলের স্কুলে পড়ার সময়ে লেখা এবং ১৯২২ থেকে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত বার্মায় অবস্থানকালে লেখা কিছু কবিতা এর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। অরওয়েল সোসাইটি এই কবিতার বইটির ৫০০ কপি মুদ্রিত করতে যাচ্ছে। এবং গ্রন্থস্বত্বের পুরো টাকাটাই কমবয়সী সেই সব ছাত্রছাত্রীদের জন্য ব্যয় করা হবে যারা বড় হয়ে সাংবাদিক বা শিক্ষক হতে চায়।

(The Independent পত্রিকার তথ্যাশ্রয়ে রচিত)

আর্টস বিভাগে প্রকাশিত বিপাশা চক্রবর্তীর আরও লেখা:

জীবন ও মৃত্যুর সঙ্গম: অর্ধনারীশ্বর অথবা তৃতীয় প্রকৃতি

 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart