ফিলিস্তিনে ঈদ উৎসব

ফিলিস্তিনে ঈদ উৎসব

ঈদুল আজহার দিনে সূর্য উদয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফিলিস্তিনের প্রাচীন শহরগুলোর বাতাস যেন আনন্দ ও দুঃখের এক অদ্ভুত মিশ্রণে পূর্ণ হয়। ঈদুল আজহা ত্যাগের উত্সব। সারা বিশ্বের মুসলমানের জন্য বিশ্বাস, দান ও পরিবারকে নিয়ে উদ্‌যাপন করার একটি দিন। যা হোক, ফিলিস্তিনে এ বছরের উত্সব চলমান সংঘর্ষ, ক্ষতি এবং স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার আশানিরাশার এক কঠোর বাস্তবতার সঙ্গে জড়িত।

মুসলিম বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মতোই ফিলিস্তিনে একই আনন্দে, একই বিশ্বাসে ঈদুল আজহা উদ্‌যাপিত হয়। পরিবারগুলো সাম্প্রদায়িক প্রার্থনার জন্য একত্র হয়। উত্সবের খাবার ভাগাভাগি করে। কোরবানির পশু বলিদানের মাধ্যমে বিশ্বাসের গভীরতাকে সম্মান করে। কঠোর অবস্থা সত্ত্বেও পরিবারগুলো একত্র হয়ে আনন্দ, প্রার্থনা এবং তাদের ত্যাগের ফল ভাগ করে নেওয়ায় ঈদের চেতনা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

স্বাভাবিক সময়ের মতো মসজিদগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত হয়ে উঠতে পারে না। কিন্তু সবার সম্মিলিত প্রার্থনা প্রতিধ্বনিত হয় রামাল্লা, হেবরন, রাফাহ ও গাজার আকাশে। এসব শহরের রাস্তাগুলো ব্যস্ত হয়ে ওঠে শেষ মুহূর্তের ক্রেতাদের ভিড়ে। প্রিয়জনদের জন্য নতুন পোশাক এবং উপহার কিনতে চাওয়া বাজার করতে আসা মানুষের পদচারণে আর কোলাহলে মুখরিত হয়। অস্থিরতার মধ্যেও সবাই স্বাভাবিক অনুভূতি ধরে রাখার চেষ্টা করে।

এ উদ্‌যাপন অনিবার্যভাবে চলমান কলহ দ্বারা আবৃত। চলমান সহিংসতায় অনেক পরিবারকে প্রিয়জন হারানোর শোকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। তাদের বাড়িঘর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। দৈনন্দিন জীবনে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা জায়গা করে নিয়েছে। গাজায়, যেখানে সংঘাতের প্রভাব সবচেয়ে তীব্রভাবে অনুভূত হয়, পরিবারগুলো সেখানে তাদের আশপাশের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে ঈদ উদ্‌যাপন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঈদুল আজহার দিনটি ফিলিস্তিনে একটি মর্মস্পর্শী তাৎপর্য গ্রহণ করে। অনেক পরিবার গুরুতর অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন। ফলে তারা কোরবানির পশু সরবরাহ করার জন্য দাতব্য সংস্থার ওপর নির্ভর করে। এ দাতব্য সংস্থাগুলোর কল্যাণে ফিলিস্তিনের অনেক মানুষ ধর্মীয় এ আচারে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়।

ফিলিস্তিনেও ঈদুল আজহা সম্প্রদায় এবং সংহতির শক্তিতে আলোকিত। দাতব্য সংস্থা এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে কোরবানির মাংস সবার মাঝে বিতরণ করার জন্য। সবচেয়ে অভাবী এবং দুর্বলদেরও ঈদ উদ্‌যাপন তারা নিশ্চিত করে। শরণার্থী শিবিরে এবং বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে এ দিনটি ভরপেট খাওয়ার নিশ্চয়তা নিয়ে আসে। সঙ্গে নিয়ে আসে আত্মীয়তার নিরাপদ অনুভূতি আর ভবিষ্যতের আশার আলো।

যদিও প্রায়ই রাজনৈতিক এবং লজিস্টিক কারণে আন্তর্জাতিক সাহায্য বাধাগ্রস্ত হয়। কিন্তু ঈদের সময় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশ্বব্যাপী মুসলিম সম্প্রদায়ের অনুদান থেকে আসা খাদ্যের বিতরণ, চিকিৎসা সরবরাহ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরিষেবার তহবিল ফিলিস্তিনবাসীকে সাহায্য করে; যা অবরুদ্ধ এ দেশটির বসবাসকারীদের জন্য স্বস্তির ঝলক।

প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ফিলিস্তিনের জনগণ আশা ও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়ার অটুট চেতনা নিয়ে ঈদুল আজহা উদ্‌যাপন করে। শিশুরা যারা এ যুদ্ধ, দ্বন্দ্ব সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না তারা নতুন জামাকাপড়, মিষ্টি এবং অবাধে খেলার বিরল সুযোগের মধ্যে আনন্দের মুহূর্তগুলো খুঁজে পায়। ভয়াবহ শোকের মধ্যেও পরিবারগুলো তাদের প্রিয়জনকে স্মরণ করার জন্য জড়ো হয়। তাদের বিশ্বাসে আর একে অন্যের মধ্যে শক্তি খুঁজে পায়।

বিভিন্ন দিক থেকে ফিলিস্তিনে ঈদুল আজহা স্থায়িত্বশীল মানবিক চেতনার প্রমাণ। ত্যাগ ও যন্ত্রণার মধ্যেও জীবন, বিশ্বাস এবং সম্প্রদায়কে উদ্‌যাপন করার জন্য একটি গভীর অঙ্গীকার। বিশ্ববাসী দেখছে, অকল্পনীয় প্রতিকূলতার মধ্যেও ফিলিস্তিনের জনগণ তাদের ঐতিহ্য, মর্যাদা এবং একটি উন্নত ভবিষ্যতের জন্য আশা বজায় রেখে চলেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart