ইসমাইল কাদারে-এর সামান্য আলাপ
যেহেতু আমি দিনে দুই ঘণ্টার বেশি কাজ করি না, আমার শুধু কফি পছন্দ, অন্য কিছু না।
ইসমাইল কাদারে ১৯৩৬ সালে আলবেনিয়ার জিরোকাস্ত্রায় জন্ম গ্রহণ করেন। সাহিত্যে কবি হিসেবে তার সূচনা। মাত্র বারো বছর বয়সে প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। তার প্রথম উপন্যাসের নাম দ্য জেনারেল অফ দ্য ডেড আর্মি, প্রকাশকাল ১৯৬৩। আরেকটি উপন্যাস দ্য প্যালেস অফ ড্রিমস ১৯৮১ সালে তার দেশের কমিউনিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে সূক্ষ্ম সমালোচনার দায়ে প্রকাশের সাথে সাথেই নিষিদ্ধ হয়। পরবর্তীকালে কাদারে গণতন্ত্রের পক্ষে বিবৃতি দেন। ফলে তাকে ১৯৯০ সালে ফ্রান্সে রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে হয়। ৩০টিরও বেশি ভাষায় তার বই অনূদিত হয়েছে। তিনি ফ্রান্স এবং আলবেনিয়ায় তার জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন। ইসমাইল কাদারের সর্বশেষ উপন্যাস এ ডিক্টেটর কলস প্রকাশিত হয় ২০২৩ সালে। ১ জুলাই ৮৮ বছর বয়সে আলবেনিয়ার তিরানায় তিনি মারা যান। কাদারের এই সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছিলেন লুক স্যাম্পসন আর তা ২০১০ সালের ৩০ আগস্ট তারিখে প্রকাশিত হয়েছিল Financial Times-এ। সাক্ষাৎকারটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক বিপাশা চক্রবর্তী। বি.স.
আপনার যথার্থ পাঠক কে?
যে-পাঠক দান্তে আলিঘিয়েরিকে পছন্দ করেন কিন্তু দন কিহোতে’কেও নির্বিঘ্নে উপভোগ করেন – ঠিক যেমন শেক্সপিয়র-পাঠ কাফকা পড়তে বাধা দেয় না।
লেখার সময় আপনি কী খেতে পছন্দ করেন?
আমি সকালের নাস্তার পরেই লেখা শুরু করি, সকাল ১০টার দিকে। যেহেতু আমি দিনে দুই ঘণ্টার বেশি কাজ করি না, আমার শুধু কফি পছন্দ, অন্য কিছু না।
আপনার কোন লেখাটা নিয়ে গর্ব বোধ করেন?
দ্য প্যালেস অফ ড্রিমস। এটি ১৯৮০ সালে লিখেছিলাম। এক বছর পরে প্রকাশিত হয়েছিল। আলবেনিয় স্বৈরশাসনের সবচেয়ে কালোতম অধ্যায়ে। এটি ছিল সেই অত্যাচারের বিরুদ্ধে একটি বই।
আপনাকে কী বেশি ভীত করে তোলে?
আমি দুটি ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক ব্যবস্থার সময় সাহিত্যকর্ম সৃষ্টি করেছি: একটি কালোতম অধ্যায় যা ৩৫ বছর ধরে চলে (১৯৫৫-১৯৯০), অন্যটি ২০ বছরের স্বাধীনতা। উভয় ক্ষেত্রেই, যে জিনিসটি সাহিত্যকে ধ্বংস করতে পারে তা একই জিনিস: সেলফ-সেন্সরশিপ।
আপনার বিছানার পাশের টেবিলে কোন বইগুলি থাকে?
যে-বইগুলি আমি আসলে খুলি না, কিন্তু সেগুলোর উপস্থিতি কিছু একটা বিকিরণ করে। ওই বইগুলো পড়ার অভিজ্ঞতার চেয়ে এই অনুভূতিটা প্রায়শই পুরোপুরি আলাদা, যা আমি হয়তো অন্য কোন সময়ও পেতে পারি। কিন্তু এই অনুভূতিটাই আমার প্রয়োজন।
আপনার কি কোন লেখার রুটিন আছে?
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত। প্যারিসে, আমি সবসময় একই ক্যাফেতে কাজ করি। তিরানায় এটা অসম্ভব, মানুষের কৌতূহলের কারণে।
কোন বইটি আপনার জীবন বদলে দিয়েছে?
ম্যাকবেথ। আমি ১১ বছর বয়সে এটি পড়েছিলাম। যদিও আমি সবকিছু বুঝতে পারিনি, আমি বইটি এতটাই পছন্দ করেছিলাম যে এটি নিজ হাতে লিখে কপি করতে শুরু করেছিলাম। এক বছর পরে, আমি হ্যামলেট-এর ক্ষেত্রেও একই কাজ করতে চেয়েছিলাম, যেটি ছিল আমার কাছে আরও অবোধ্য।
আপনি অবসরে কী করতে পছন্দ করেন?
আমি হাঁটি। প্যারিসে, আমি লুক্সেমবার্গ গার্ডেনে হাঁটতে যাই। যেটা আমার বাড়ির ঠিক বিপরীতে। গ্রীষ্মে,আলবেনিয়ার সমুদ্রতীরে।
আপনার উপর কাদের সাহিত্যিক প্রভাব রয়েছে?
ইউরোপের তিনটি অঞ্চল: দান্তের এপেন্নিস; গ্রীক ট্রাজেডি আর মধ্যযুগীয় আলবেনিয় শোকগাথায় ঘেরা বলকান অঞ্চল; দন কিহোতের আইবেরিয় অঞ্চল। বৃটিশ দ্বীপপুজ্ঞ (শেক্সপিয়র)। রুশ এবং কেন্দ্রীয় ইউরোপিয় সাহিত্য (কাফকা)।
আপনি যে লেখক হতে যাচ্ছেন এটা কখন বুঝতে পারলেন?
আমার বয়স যখন ১২। যেহেতু তখন যা লিখেছিলাম সেগুলোর তেমন কোনো গুরুত্ব ছিল না, তাই নিজেকে একজন গুরুত্বপূর্ণ লেখক হিসাবে ভাবা সহজ ছিল। পরে, এটা অন্য রকম হয়ে গেল।