হিরোনিমাস বোশ্চ: দোজখের রহস্যময় চিত্রকরের প্রথম জীবন ও গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকর্ম

নেদারল্যান্ডের চিত্রকর হিরোনিমাস বোশ্চ যার জীবন ও কর্ম দীর্ঘকাল ধরে সারা পৃথিবীর শিল্পপ্রেমীদের মাত করে রেখেছে। বহু বছর পরও তার প্রভাব এই গত শতকের বহু শিল্পীর উপরে তো ছিলই, এমনকি আজও তা অব্যাহত। সালভাদর দালি কিংবা রেমেদিওস ভারোর মতো শিল্পী ছিলেন তারই রক্তের প্রতিধ্বনি। বোশ্চের ছবি দেখে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। এই মুগ্ধতার জন্য বোশ্চের আজ অবধি টিকে থাকা মাত্র ২০টি চিত্রকর্মকে সন্দেহাতীতভাবে দায়ী করা যায়। তাঁকে বিবেচনা করা হয় নর্দার্ন রেনেসাঁসের অন্যতম সেরা শিল্পী হিসেবে। ভাবনা এবং শৈলী– শিল্পের এই দুই প্রধান দিকের কথা যদি ভাবা যায় , তাহলে বোশ্চ ছিলেন ভাবনার ঐশ্বর্যে পরিপূর্ণ এক শিল্পী যা তাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে দিয়েছে। বাইবেলভিত্তিক ধর্মীয় প্রতীকবাদ, রূপক এবং খেয়ালী উপাদানে সমৃদ্ধ তার চিত্রকর্ম । অস্থির কল্পনাপ্রসূত দৃশ্যগুলি এমনভাবে বিস্তৃত যা পুরো চিত্রকর্মকে আগাগোড়া এক ব্যস্তবাগীশ বৈশিষ্ট্য দান করেছে। তাঁর প্রারম্ভিক জনাকীর্ণ পরাবাস্তববাদী চিত্রগুলো অনেকের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছে। তবে তাঁর প্রাথমিক জীবন এবং কাজের উৎস নিয়ে এখন পর্যন্ত ব্যাপক আলোচনা হয়নি। পরিচিতিও পাননি ততটা, যতটা হওয়া উচিত ছিল। ইতিহাসবিদরাও খুব বেশি কিছু জানতে পারেন নি। চিত্রকলার ইতিহাসে যে কয়েকজন হাতে গোনা শিল্পী পূজনীয় এবং রহস্যময় হয়ে আছেন, বোশ্চকে তাঁদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে গণ্য করা যায়। তিনি যখন তাঁর শিল্পীজীবনের মধ্যগগনে তখন পুরো ইউরোপ জুড়ে বিখ্যাত ছিলেন। নেদারল্যান্ডস, স্পেন, অস্ট্রিয়া এবং ইতালির শিল্পপ্রেমীরা তাঁর কাজ উপভোগ করছিলেন। অনেক ক্ষেত্রে অনুকরণও করছিলেন। তবুও, ইতিহাসবিদরা এই চিত্রশিল্পীর জীবন সম্পর্কে আশ্চর্যজনকভাবে খুব কম জানেন। ব্যাপারটা আরো জটিল হয়েছে এই জন্য যে, হিরোনিমাস বোশ্চ নিজস্ব কোন ডায়েরী, চিঠিপত্র বা কোন নথি রেখে যান নি। শিল্প-ইতিহাসবিদদের মতে এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে তাঁর ২৫ টি চিত্রকর্ম পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে নিশ্চিতভাবে ২০টি চিত্রকর্ম সারা পৃথিবীজুড়ে বিখ্যাত ও সমাদৃত যা তাঁকে মহিমান্বিত করেছে। তিনি সর্বাধিক পরিচিতি পান সেসব বাইবেলীয় ভূদৃশ্যগুলোর জন্য যেগুলো তিনি চমৎকার অভিনব কায়দায় চিত্রিত করেছিলেন। মানুষ,অর্ধ-মানব, দানব, যন্ত্র, পশু, পাখি এবং সঙ্করপ্রজাতির জীবজন্তুর ছবি আঁকতেন যা প্রায়শই নারকীয়, কখনো ভীতিকর। এসবই তিনি ছোট আকারের প্রতিকৃতির মাধ্যমে তিরস্কারের ভঙ্গিতে তুলে ধরেছেন। এই কাজগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই মানবীয় দুর্বলতাকে চিত্রিত করে। পাপীদের চিরন্তন পরিণতির স্মারক হিসেবে সাবধান বাণী পরিবেশন করে। বোশ্চ খুব সম্ভবত ৬০ থেকে ৭০ বছর বয়সের মাঝামাঝি সময়ে ১৫১৬ সালে মারা যান। এমনটা বলার বা অনুমান করার কারণ, নেদারল্যান্ডে শিল্পী নিজ শহর ‘এস-হার্টোজেনবোশ্চ’এ ১৫১৬ সালের ৯ আগস্ট তাঁর শেষকৃত্যের জমায়েত অনুষ্ঠিত হয়েছিলো বলে ইতিহাসবিদরা মত দিয়েছেন।

চিত্রকর্ম: The Garden of Earthly Delights (detail)

বোশ্চ কখনও তাঁর কাজগুলিতে তারিখ উল্লেখ করেননি। তাই তিনি এসব শিল্পকর্ম কখন এঁকেছিলেন তা আমরা ঠিক জানি না । চিত্রকর্মগুলি সমাপ্তির সময় তাঁর বয়স কত ছিল সে সম্পর্কেও কেবল অনুমান করা যায়। আমরা যা জানি তা এখানে দেয়ার চেষ্টা করলাম।

তাঁর বিশ্ববিখ্যাত কাজ, দ্য গার্ডেন অফ আর্থলি ডিলাইটস ( আনুমানিক১৪৯০-১৫০০) এর সমাপ্তি পর্যন্ত তরুণ বোশ্চের কর্মজীবনের মূল মাইলফলকগুলো আমরা চিহ্নিত করার চেষ্টা করব।

চিত্রকর্ম: Hieronymus Bosch, Hulton Archive/Getty Images

তিনি চিত্রকর পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন।

হিরোনিমাস বোশ্চ ১৪৫০ থেকে ১৪৫৬ এর মধ্যে ডাচ শহর ‘এস-হার্টোজেনবোশ্চ’ এ জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি অ্যান্টোনিয়াস ভ্যান আকেন এবং আলেইড ভ্যান ডার মায়েনেনের পাঁচ সন্তানের মধ্যে চতুর্থ ছিলেন। বোশ্চের দাদা জোহানেস টমাসজুন ভ্যান আকেন পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ‘এস- হার্টোজেনবোশ্চ’ শহরের সবচেয়ে বিশিষ্ট চিত্রশিল্পীদের একজন ছিলেন। শিল্প-ইতিহাসবিদ স্টিফান ফিশারের ২০১৪ সালের বই হিরোনিমাস বোশ্চ: দ্য কমপ্লিট ওয়ার্কস অনুসারে,জোহানেস তাঁর পরিবারকে ‘চিত্রকর রাজবংশ’ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন যাতে করে তাঁর সন্তান এবং নাতি-পুতিদের জন্য তুলনামূলকভাবে স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন যাপনের নিশ্চয়তা থাকে। যদিও বোশ্চের বাবার শিল্পচর্চা সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। তাঁর বাবা অ্যান্টনিয়াসের কর্মশালার সদস্য হিসাবে ১৪৭৫ সালের নথিগুলিতে হিরোনিমাস নামের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়।

বোশ্চের জীবনের মতোই তার নামও অস্পষ্ট। শতাব্দী ধরে, শিল্পীর প্রথম নাম হিরোনিমাস, ঝেরোনিমাস, জেরন, জেরম, এবং জেরমি ( Heironymous, Jheronimus, Jeroen, Jerom এবং Jerome) হিসাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এবং ১৬০৪ সালে, শিল্পীর প্রথম জীবনীকার ডাচ শিল্প-ইতিহাসবিদ ক্যারেল ভ্যান ম্যান্ডার – আইরোনিমাস নামটি ব্যবহার করেছিলেন। একই সময়ে, ১৬ শতকের শিল্প-সমালোচক জোসে ডি সিগুয়েঞ্জা বোশ্চের প্রথম নাম জেরোনিমো হিসাবে লিখেছিলেন। চিত্রকরের শেষ নাম হিসাবে, বোশ্চ আসলে তার নাম নয়। এটি তার নিজ শহর, ‘এস-হার্টোজেনবোশ্চ’ থেকে এসেছে। এই শহরের স্থানীয়রা ‘ডেন বোশ্চ’ নামে পরিচিত ছিল । এবং বোশ্চ এই উপনামটিকে তার উপাধি হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন। ঐতিহাসিকরা বোশ্চের আসল শেষ নামটি লিপিবদ্ধ করেছেন অ্যান্থোনিসেন, অ্যান্থোনিজুন, ভ্যান একেন বা ভ্যান একেন। বেশিরভাগ সমসাময়িক সূত্র বলে যে বোশ্চের জন্ম নাম ছিল, আসলে, জেরোনিমাস ভ্যান অ্যাকেন-তাহলে এত রকমের নাম কেন? শিল্প-ইতিহাসবিদ নিলস বাটনার তার ২০১৬ সালের জীবনী, হায়ারোনিমাস বোশ্চ: ভিশনস অ্যান্ড নাইটমেয়ারস-এ কিছু স্পষ্টতা প্রদান করেছেন। বাটনারের মতে, বোশ্চ অফিসিয়াল আইনি নথিতে স্বাক্ষর করার সময় ‘হিয়ারনিমাস ভ্যান আকেন’ নামটি ব্যবহার করেছিলেন।

The Illustrious Brotherhood of Our Blessed Lady /দ্য ইলাস্ট্রিয়াস ব্রাদারহুড অফ আওয়ার ব্লেসেড লেডি ( ডাচ ভাষায় -ইলাস্ট্রে লিভ ভ্রুয়ে ব্রোডারশ্যাপ)-এর নথিপত্র হিয়ারনিমাস ভ্যান আকেন নামটিই উল্লেখ করে। এটি একটি ধর্মীয় বন্ধু বা ভাতৃসংঘ। ১৩১৮ সালে ‘এসহার্টোজেনবোশ্চ’ শহরে ঈশ্বরের মাতার পূজার প্রচারের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ভার্জিন মেরির একটি খোদাইকৃত কাঠের প্রতিমূর্তিকে ঘিরে এই ভ্রাতৃত্বের আয়োজন করা হয়েছিল শহরের সেন্ট যোহন’স ক্যাথেড্রালে। বোশ্চ এই সঙ্ঘের সদস্য ছিলেন। প্রকাশ্যে তিনি ঝেরোনিমাস বোশ্চ নামে পরিচিত ছিলেন। এদিকে, আবার বোশ্চের পরিবার এবং সহকর্মীরা তাঁকে কেবল জোয়েন বলে ডাকত। বর্তমানে, বেশিরভাগ একাডেমিক ব্যক্তিত্বরা সহজভাবে এই শিল্পীকে হিরোনিমাস বোশ্চ হিসেবে উল্লেখ করেন।

১৪৬৩ সালে বোশ্চের শহরে আগুন লেগেছিলো।

১৩ই জুন ১৪৬৩ খ্রীষ্টাব্দে এস-হার্টোজেনবোশ্চে আগ্নিকান্ড ঘটে। ভয়ানক সেই আগুনে বোশ্চের শৈশবের বাড়িটিসহ শহরের প্রায় চারহাজার বাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। বিশ্বাস করা হয় যে, শিল্পী এই বিপর্যয় প্রত্যক্ষ করেছিলেন। যা হয়তো তার প্রথম জীবনের সবচেয়ে বিধ্বংসী ঘটনাগুলির মধ্যে একটি। এমনটি হওয়া সম্ভব যে, সর্বনাশা ঘটনাটি বোশ্চের পরবর্তী কাজগুলোকে প্রভাবিত করেছিল। তার বেশ কিছু চিত্রের পটভূমিতে জলন্ত আগুনের ক্রোধ দেখা যায়।

তরুণ বয়সে বোশ্চ একজন বণিকের মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন।

পণ্ডিতরা এখনো অনিশ্চিত যে, বোশ্চ ১৪৭৫ থেকে ১৪৮০ এর মধ্যে ঠিক কী অবস্থায় ছিলেন। কিন্তু তারা এটা জানেন যে, তিনি ১৪৮০ থেকে ১৪৮১ এর মধ্যে কোন এক ধনী পরিবার থেকে আসা এলিউড ভ্যান ডার মেরউইয়েন নামে এক নারীকে বিয়ে করেছিলেন। ফিশারের মতে, এই মিলনের মধ্য দিয়ে বোশ্চ লাভবান হয়েছিলেন। পুঁজি,জমি এবং মর্যাদা পেয়েছিলেন। বিয়ের পরপরই এই দম্পতি তাদের নিজস্ব কর্মশালা স্থাপন করেছিলেন। জীবনের এই সময়ে বোশ্চ তার নিজের দিক থেকে একজন শিল্পী হয়ে উঠেছিলেন । এবং প্রভাবশালী রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকদের সঙ্গে অর্থপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন।

শিল্পীর প্রথমদিকের কাজগুলি স্পষ্টভাবে ধর্মীয় দৃশ্যগুলি চিত্রিত করে।

চিত্রকর্ম: Crucifixion with Saints and Donor, ca. 1490, oil on panel. J. Geleyns/© Royal Museums of Fine Arts of Belgium

বেলজিয়ামের রয়্যাল মিউজিয়াম অব ফাইন আর্টস -এর সংগ্রহে এখন রয়েছে Crucifixion with Saints and Donor ( আনুমানিক ১৪৮৫-৯০) নামক চিত্রকর্মটি। যা বোশ্চের শিল্পী জীবনের গোড়ার দিকের টিকে থাকা কাজগুলির একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফিশার লিখেছেন, যদিও এটি মূলত কোথায় কখন প্রদর্শিত হয়েছিল তা অজানা রয়ে গেছে। এই পেইন্টিংটি সেই সময়ের অন্যান্য অনেক ভক্তিমূলক চিত্রের মতোই একটি। এটি ভক্তের আত্মার পরিত্রাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ক্রুশের পাদদেশে হাঁটু গেড়ে নতজানু হওয়ার দৃশ্যকে চিত্রিত করেছিল। Crucifixion with Saints and Donor চিত্রকর্মের একটি অংশ কিছুটা অস্বাভাবিক যা উদ্ভট, চমকপ্রদ এবং বিভ্রান্তিকর চিত্রকলার ধরণকে সমর্থন করে। বোশ্চ পরবর্তীতে বিভিন্ন ধর্মীয় বিষয়বস্তুর উপর করা তাঁর কাজগুলোতে এই স্বতন্ত্র শৈলী উপস্থাপন করেন।

চিত্রকর্ম: St. Jerome at Prayer/ WIKIMEDIA COMMONS

বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায় খ্রীষ্টান সাধুসন্তকে নিয়ে অংকিত চিত্রগুলির কথা। সেন্ট জেরোম ইন প্রেয়ার (আনুমানিক ১৪৮৫-১৪৯০)/ St. Jerome at Prayer, যেখানে দেখা যায়, সাধু জনহীন অনুর্বর প্রান্তরে প্রায় অবরুদ্ধ হয়ে ঘিরে থাকা স্থানে আঁটসাঁটভাবে নিজের শরীরকে কোন রকমে আটকে রেখেছেন। ঐ অবস্থাতেও তিনি ক্রুশবিদ্ধ যীশুর ছোট একটি মূর্তি দৃঢ়মুষ্টিতে আঁকড়ে ধরে আছেন।

তৈলচিত্র সেন্ট জন দ্য ব্যাপটিস্ট ইন মেডিটেশন ( আনুমানিক১৪৯০),অতিকায় অচেনা গাছের পাশে উজ্জ্বল লাল পোষাকে একজন সাধু কিছুটা ভয় আর আচ্ছন্ন অবস্থায় পরলৌকিক চিন্তায় মগ্ন। যা এখন মাদ্রিদের একটি সংগ্রহশালায় আছে ।

চিত্রকর্ম: Hieronymus Bosch, St. John the Baptist in Meditation, ca. 1490, oil on panel. WIKIMEDIA COMMONS

গির্জার বেদীতে রাখার জন্য ওক প্যানেলে করা তৈল চিত্রকর্ম সেন্ট যোহন ইন প্যাটমোস St. John on Patmos। খুব সম্ভবত এটি ‘এস-হার্টোজেনবোশ্চ’ শহরের সেন্ট যোহন ক্যাথেড্রেলের জন্য চিত্রিত হয়েছিল। সালটা আনুমানিক ১৪৮৫। এই চিত্রকর্মটির উভয় পাশেই আঁকা হয়েছে। প্রথম পাশটিতে দেখা যায় যীশুর প্রেরিত শিষ্য যোহন এজিয়ান সাগরের তীরে প্যাটমোস দ্বীপে দুই ডানাওয়ালা কুমারি মেরীর মূর্তির সামনে বসে নিউ টেস্টামেনের ‘বুক অব রিভেলেশন’ লিখছেন। উপরে একপাশ থেকে তাকে আশির্বাদ দিচ্ছেন নবজাতক যিশুকে কোলে নিয়ে মাতা মেরী । যা আঁকা হয়েছে ছোট বৃত্তের মাঝে। আর নিচে একপাশে সরিসৃপের লেজওয়ালা নাকেআঁটা গোল চশমা পরা শয়তান। তার মাথার উপরে ছোট্ট আগুন জ্বলছে । শয়তান বুক অব রিভলশনের বাণী ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। চিত্রকর্মটির উল্টো পাশে বৃত্তাকারে যীশুর অন্তিম দিনগুলির দুঃখগাঁথা আঁকা হয়েছে। চিত্রকর্মটি বর্তমানে জার্মানীর বার্লিনে সংরক্ষিত।

চিত্রকর্ম: St. John on Patmos

চিত্রকর্ম: Scenes from the Passion of Christ, reverse side of St. John on Patmos/ WIKIMEDIA COMMONS

এই সব চিত্রকর্ম পরাবস্তব কল্পনা ও রংয়ের ব্যবহারে সমৃদ্ধ। মনে হবে, বোশ্চ আগে থেকেই চিন্তা করে বিচিত্র বিষয়বস্তুগুলো চিত্রকর্মে উপস্থাপন করেছেন।

চিত্রকর্ম:Triptych of the Adoration of the Magi, ca. 1494 Museo del Prado, Madrid

বোশ্চের পরবর্তী কাজগুলোতে যে নারকীয় দৃশ্য ফুটে উঠবে তার পূর্বাভাস পাওয়া যায় Triptych of the Adoration of the Magi ট্রিপটাইচ অব দ্য অ্যাডোরেশন অব দ্য মাগি’–আনুমানিক ১৪৯৪ সালের আঁকা এই চিত্রটিতে।

একটি ট্রিপটাইচ হল তিনটি টুকরো বা প্যানেল কব্জা দিয়ে পাশাপাশি জোড়া লাগিয়ে তৈরি একটি আর্টওয়ার্ক । যা প্রায়শই ধারা বর্ণনা প্রদান করতে, বা একই বিষয়ের বিভিন্ন উপাদান দেখানোর জন্য একটি ক্রম তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। ট্রিপটাইচ শিল্পের একটি একক অংশকে তিনটিতে বিভক্ত করে বা তিনটি অংশকে একত্রিত করতেও ব্যবহৃত হয়।

বেলজিয়ামের বন্দর নগরী অ্যান্টোয়ার্পের অধিবাসী এক দম্পতির ফরমায়েশে এই ট্রিপটাইচটি এঁকেছিলেন বোশ্চ। এটি এখন মাদ্রিদের ‘মুসেও দেল প্রাদো’ জাদুঘরের সংগ্রহে আছে। চিত্রটি বোশ্চের একটি মাস্টারপিস হিসেবে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। চিত্রকর্মটির অভ্যন্তরীণ প্যানেলে বাইবেলের ঘটনাকে চিত্রিত করার কাজটি অ্যান্টওয়ার্প দম্পতি পিটার শেফভ এবং অ্যাগনিস ডি গ্রামের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। চিত্রটি ধর্মীয় প্রতীকে পরিপূর্ণ এবং বিস্তৃত বিবরণে সমৃদ্ধ। এটাতে দেখা যায় মাতা মেরি যীশুকে কোলে নিয়ে প্রায় ভগ্নদশার খড়ের চালওয়ালা কুটিরের নীচে বসে উপহার গ্রহণ করছেন। আর আশেপাশে থাকা লোকজন বিস্মিত দর্শকের মতো ভৌতিক মুখ নিয়ে বাড়ির চারপাশ থেকে উঁকি দিচ্ছে। এবং নির্দেশদাতা ঐ দম্পতি চিত্রের বাম অংশ এবং ডানদিকের অংশে প্রতিনিধিত্ব করছেন। বোশ্চ সম্ভবত বেথলেহেম শহরের একটি বিস্তৃতরূপ অংকন করেছিলেন। চিত্রের কেন্দ্রীয় ক্রিয়াটি পটভূমিতে থাকা দুটি সেনাবাহিনীর আসন্ন সংঘর্ষের ঠিক আগ মুহূর্তে ঘটছিল। যা আপেক্ষিকভাবে সবুজ শ্যামল স্থির শান্ত প্রকৃতির বলে মনে হচ্ছে তা খুব শিঘ্রই বিশৃঙ্খল আর দুঃস্বপ্নমন্ডিত ধর্মীয় দৃশ্য হিসেবে উপস্থাপিত হবে।

তিনি যত সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তার কাজের মধ্যে ভীতিকর বিষয়বস্তু ততই স্পষ্ট হয়ে উঠছিল।

চিত্রকর্ম: The Temptation of Saint Anthony (ca. 1500), a triptych/ WIKIMEDIA COMMONS

শিল্প-ইতিহাসবিদ ফিশারের মতে, বোশ্চ ১৪৯৯ সালের দিকে কমপক্ষে একজন সহকারী নিয়োগ করতে শুরু করেছিলেন– অজ্ঞাত একজন পৃষ্ঠপোষকের ফরমায়েশে আরেকটি দৃষ্টিনন্দন শিল্পকর্ম সম্পন্ন করার ঠিক আগে। তিনি যে কোন এক সময়ে একজন সহকারী নিয়োগ করতে পেরেছিলেন, এটা তার সফলতা অর্জনেরই লক্ষণ। এসময় বোশ্চ ‘দ্য টেম্পেশনেশন অব সেন্ট অ্যান্টনি” তৈরি করেন। এটিও একটি ট্রিপটাইচ। সালটা আনুমানিক ১৫০০। এর অভ্যন্তরীণ দৃশ্যের ঘটনাপঞ্জিতে দেখা যায় সাধু অ্যান্টনির মোক্ষ প্রাপ্তিকে দমন করার জন্য নানান অপদেবতারা এবং অশুভ শক্তিরা ব্যর্থ প্রচেষ্টায় লিপ্ত। চিত্রকর্মের কেন্দ্রীয় পটভূমি নারকীয় অগ্নিশিখার দখলদারিত্ব প্রদর্শন করে। এই নরকের অধিবাসী বহুরকমের অপচ্ছায়ারা সাধু অ্যান্টনিকে ব্যভিচার ও পাপের পথে প্ররোচিত করার চেষ্টা করে।

চিত্রকর্ম: The Garden of Earthly Delights, 1490-1500 Museo del Prado, Madrid

দ্য গার্ডেন অফ আর্থলি ডিলাইটস

বোশ্চের সবচেয়ে বিখ্যাত ও প্রভাবশালী চিত্রকর্ম হচ্ছে ‘দ্য গার্ডেন অফ আর্থলি ডিলাইটস’। শুধু এই চিত্রকর্মটি নিয়েই দীর্ঘ আলোচনা চলতে পারে। এটিও ওক কাঠের প্যানেলে নির্মিত আরেকটি ট্রিপটাইচ। শিল্প-ইতিহাসবিদ গবেষক ও সমালোচকরা বিভিন্ন সময় এই শিল্পকর্মকে নানাভাবে ব্যাখা করেছেন,আখ্যায়িত করেছেন। ৫০০ বছর পরেও এর আবেদন একটুও ফিকে হয়নি। পরবর্তীকালের চিত্রকররা তো বটেই লেখক, সাহিত্যিক, সঙ্গীতকার, ফ্যাশন ডিজাইনার, হালের নেটিজেনরা পর্যন্ত এই চিত্রকর্মের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে চলেছেন। করেছেন নানা মাধ্যেমে অনুকরণও। নিঃসন্দেহে এটি হিরোনিমাস বোশ্চের একটি কালজয়ী সৃষ্টি। শিল্পকর্মটি বর্তমানে স্পেনের মাদ্রিদে ন্যাশনাল আর্ট মিউজিয়াম ‘মুসেও দেল প্রাদো’তে সংরক্ষিত আছে। এটি সম্পন্ন করবার সময় বোশ্চের বয়স ৪০-৬০ বছরের মাঝামাঝি ছিল।

অনেক ইতিহাসবিদদের মতে দ্য গার্ডেন অফ আর্থলি ডিলাইটস নেদারল্যান্ডের বনেদী ও ধনী পরিবার নাসাউ-ব্রেদার কাউন্ট তৃতীয় হেনরির বিবাহের স্মরণে স্মারক হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল। অথবা এটি নাসাউ-ব্রেদার প্রাসাদের দেয়ালে প্রদর্শনের উদ্দেশে তৈরি করা হয়েছিল। ফিশার ব্যাখ্যা করেছেন এই চিত্রকর্মটির উদ্দেশ্য ছিল বাইবেলের দৃষ্টিতে গল্প বলার ভঙ্গিতে বিবাহের “সুবিধা এবং বিপদ” চিত্রিত করা । ট্রিপটিচের বামপাশের অংশে আদম এবং হাওয়াকে একটি ছন্দবদ্ধ মিলযুক্ত পটভূমিতে দেখা যায়। কেন্দ্রের অংশে একটি বিলাবহুল আনন্দময় স্বর্গ এবং ডান প্যানেলে লাগামছাড়া প্রেমীদের জন্য একটি জ্বলন্ত নরক অপেক্ষা করছে। কিন্তু, তার অন্যান্য অনেক কাজের মতোই, হাস্যরসে আর অর্থহীনতার প্রতি বোশ্চের ঝোঁক তার এই মাস্টারপিসে ফুটে উঠেছে। নগ্ন মূর্তিগুলি তাদের পাতলা শরীরকে একত্রে মোচড় দেয় এবং অ্যাক্রোবেটিক ভঙ্গি করে, পাখি এবং প্রাণীরা কামোত্তেজক উচ্ছ্বাস দেখে বা যোগ দেয় এবং কিছু অংশগ্রহণকারী আরামদায়ক বিভিন্ন আকার এবং রঙের ঘেরে একত্রিত হয়। এমনকি ট্রিপটিচের ডানদিকের ক্ষিপ্ত ধ্বংসের দৃশ্যেও চপলতা পাওয়া যায় যেখানে একজন দন্ডপ্রাপ্ত মানুষ মল থেকে সোনার মুদ্রা ছড়াচ্ছে। আরেকজন বিরাট এক চাবির রিংয়ের মধ্যে ঝুলছে। একটা ছুরির দুইটি কান আছে। বীণা নিজেই বাজনাদারকে বাজাচ্ছে। আগুন বরফ হয়ে জমে আছে। একটি শুয়োর নানের পোশাক পরে আছে। ডিমের ভিতর মৃত্যু বাস করছে। যন্ত্র মানুষকে চালাচ্ছে। প্রতিটি মাথাই তার নিজ দুনিয়ায় বাস করে। কেউ কারো সাথে সাক্ষাৎ করেনা। সবাই দৌঁড়াচ্ছে কিন্তু কোথাও যাচ্ছে না। তাদের কোন কিছুতেই মিল নেই, শুধু পারস্পরিক ভয় ছাড়া। শিল্প-সমালোচক জন বার্জারের উদ্বৃতি অনুযায়ী “পাঁচশো বছর আগে, হিরোনিমাস বোশ্চ বিশ্বায়নের এমনই এক ছবি এঁকেছিলেন।” দ্য গার্ডেন অফ আর্থলি ডিলাইটস সৃষ্টির ৫০০ বছরেরও বেশি সময় পরে, বোশ্চের সীমাহীন কল্পনাকে সামনে নিয়ে আসে, যা শিল্প-ইতিহাসবিদ এবং শিল্প-প্রেমীদের জন্য একইভাবে তীব্র মুগ্ধতা এবং বিনোদনের উৎস হিসাবে রয়ে গেছে।

চিত্রকর্ম: the right panel of Hieronymus Bosch, The Garden of Earthly Delights , 1490-1500. Image via Wikimedia Commons

দ্য গার্ডেন অফ আর্থলি ডিলাইটস-এ বোশ্চ নিজের একটি আত্ম-প্রতিকৃতি অন্তর্ভুক্ত করে থাকতে পারেন । এখন পর্যন্ত টিকে যাওয়া বোশ্চের কোন নির্ভরযোগ্য প্রতিকৃতি নেই। তাই আমরা জানি না তিনি ঠিক কেমন দেখতে ছিলেন। যাইহোক, একজন শিল্প-ইতিহাসবিদ, হ্যান্স বেল্টিং বিশ্বাস করেন যে তিনি দ্য গার্ডেন অফ আর্থলি ডিলাইটস-এ তার নিজস্ব চিত্র অন্তর্ভুক্ত করেছেন। বেল্টিং তত্ত্ব দিয়েছিলেন যে তৃতীয় প্যানেলের মাঝখানে ফাটা ডিমের খোসা-মানবটি বোশ্চ। যে দর্শকের দিকে বিদ্রুপাত্মকভাবে হাসছে।

বোশ্চ হয়তো ৫০০ বছর আগে মারা গেছেন, কিন্তু সমসাময়িক সঙ্গীতজ্ঞ, ডিজাইনার, কোরিওগ্রাফার, শিল্পী এবং লেখকরা তাঁর কাজ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে চলেছেন – প্রধানত তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত এই চিত্রকর্ম, দ্য গার্ডেন অফ আর্থলি ডিলাইটস থেকে।

ইংলিশ রক ব্যান্ড XTC (এক্স টি সি )তাদের ১৯৮৯ সালের অ্যালবাম অরেঞ্জস অ্যান্ড লেমনসের জন্য “গার্ডেন অফ আর্থলি ডিলাইটস” নামে একটি ট্র্যাক রেকর্ড করেছে৷ রাফ সিমনস ২০১২ থেকে ২০১৫ সালের শেষ পর্যন্ত ক্রিশ্চিয়ান ডিওরের সৃজনশীল পরিচালক হিসেবে কাজ করেছিলেন। সিমনস ২০১৫ সালে,চিত্রকর্মটির উপর ভিত্তি করে একটি পোষাকের সম্পূর্ণ ফ্যাশন সংগ্রহ পেশ করেছিলেন। কোরিওগ্রাফার এবং পরিচালক মার্থা ক্লার্ক এই কাজটিকে একটি নৃত্যনাট্যের মাধ্যমে থিয়েটার প্রযোজনার মধ্যে নিয়ে আসেন। ডাঃ মার্টেনস বোশ্চের সৃষ্টিতে অনুপ্রাণিত হয়ে ২০১৪ সালের স্প্রিং / সামার মৌসুমের জন্য, স্বর্গ এবং নরক-মুদ্রিত বুট জুতা এবং ব্যাগ তৈরি করেছেন। অপরাধ-লেখক মাইকেল কনেলি তার জনপ্রিয় গোয়েন্দা চরিত্রের নামকরণ হায়ারোনিমাস “হ্যারি” বোশ্চ করেছেন চিত্রশিল্পীর নামে। এমনকি বোশ্চ-থিমযুক্ত রঙের বই প্রচ্ছদ মলাট রয়েছে। যদিও ‘দ্য গার্ডেন অফ আর্থলি ডিলাইটস’ বোশ্চের একটি অবিসংবাদিত মাস্টারপিস যা পার্থিব জীবন থেকে স্বর্গ-নরক পর্যন্ত সমগ্র মানব অভিজ্ঞতাকে তিনটি সহগামী ক্যানভাসে চিত্রিত করে। তারপরেও তার অন্যান্য কম পরিচিত অথচ চমৎকার সৃষ্টিকর্ম রয়েছে। যেমন দ্য লাস্ট জাজমেন্ট The Last Judgment এবংদ্য হেওয়াইন ট্রিপটিচ The Haywain Triptych।

উভয় চিত্রই সৃষ্টির শুরু থেকে পাপী পার্থিব অস্তিত্বের মাঝে মানবতার পথকে অনুসন্ধান করে এক অগ্নিময় অভিশপ্ত উপায়ে।

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তার অনেক সৃষ্টি হারিয়ে গেছে। বোশ্চের অনেক কাজ ধর্মীয় পৃষ্ঠপোষকদের জন্য তৈরি করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। যাইহোক, প্রভাবশালী ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তিত্বরাও তার বিস্তৃত চিত্রকর্মগুলি উপভোগ করেছেন এবং কিনেছেন। তার অনেক কাজ শাসক বা অন্যান্য ধনী পৃষ্ঠপোষক দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। তার চিত্রকর্মের প্রথম ধনী সংগ্রাহকদের মধ্যে অন্যতম স্পেনের দ্বিতীয় ফেলিপ। তিনি ১৬ শতকের শেষের দিকে বোশ্চের একাধিক কাজ সংগ্রহ করেছিলেন। সেই সংগ্রহের অনেকগুলি আজ মাদ্রিদের ‘মুসেও দেল প্রাদো’ জাদুঘরে দেখা যায়।

সম্প্রতি বিশেষজ্ঞরা বোশ্চের একটি “হারিয়ে যাওয়া” চিত্রকর্ম পুনরায় আবিষ্কার করেছেন৷

চিত্রকর্ম:The Temptation of St. Anthony The Nelson-Atkins Museum

বোশ্চের চিত্রকর্মগুলি বিশ্বের বিখ্যাত কিছু জাদুঘরের সংগ্রহে প্রদর্শিত হচ্ছে। প্যারিসের ল্যুভর, নিউইয়র্কের মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্ট এবং ওয়াশিংটন, ডি.সি’র ন্যাশনাল গ্যালারি অফ আর্টসহ আরো নামী দামী সংগ্রহশালায়। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই কিছুদিন আগে তার একটি চিত্রকর্ম পুনরায় উদ্ধার করা হয়। মিসৌরির কানসাস সিটির নেলসন-অ্যাটকিন্স মিউজিয়াম অফ আর্ট-এ কয়েক দশক ধরে একটি চিত্রকর্ম স্টোরেজে পড়েছিল। এটি ছিল চিত্রকরের ভুলে যাওয়া কাজগুলির মধ্যে একটি । নেলসন-অ্যাটকিনস মিউজিয়াম চিত্রকর্মটি সংগ্রহ করেছিল সম্ভবত ১৯৩০-এর দশকে। ‘দ্য টেম্পটেশন অফ সেন্ট অ্যান্টনি’ নামে পরিচিত একটি একক চিত্রকর্ম। অর্থাৎ সিঙ্গেল প্যানেলে করা চিত্রকর্ম একই শিরোনামে বোশ্চের একটি ট্রিপটাইচ আছে। কাজটি সম্ভবত ১৫০০ থেকে ১৫১০ সালের মধ্যে তৈরি করা হয়েছিল৷ এটিতে দেখানো হয়েছে যে একজন সাধু জলাধার থেকে একটি জগ জলে ভর্তি করছেন । যেন তিনি একটি বস্তুর মাধ্যমে নিজের জন্য সাহায্য নিচ্ছেন। জলে ভাসমান অবস্থায় ও চারপাশের পটভূমিতে ছোট আকারের অদ্ভুত কিছু জীব ও জিনিসপত্র দেখা যাচ্ছে। একটি ভাসমান সসেজ, জল থেকে বেরিয়ে আসা একটি কালো ব্যাঙ পাশেই হাইব্রিড শেয়াল দানব, অদ্ভুত মাছ ,যোদ্ধা অথবা কচ্ছপ। এইসব কিছু পুরো চিত্রকর্মটিকে হেয়ালিপূর্ণ পরাবস্তব আবহ দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেছিলেন যে এটি বোশ্চের একজন ছাত্র অংকন করেছিলো। যিনি ‘এস-হার্টোজেনবোশ’-এ শিল্পীর অধীনে একটি কর্মশালায় অধ্যয়ন করেছিলেন৷ কিন্তু ২০১৬ সালের শুরুর দিকে, বোশ্চ রিসার্চ অ্যান্ড কনজারভেশন প্রজেক্ট (BRCP) নামে একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞরা ঘোষণা করেন যে বোশ্চ নিজেই ‘দ্য টেম্পটেশন অফ সেন্ট অ্যান্থনি’ এঁকেছেন। গবেষকরা সারা বিশ্বের জাদুঘরে প্রদর্শিত বোশ্চের অন্যান্য কাজের সাথে এই চিত্রকর্মটি পরীক্ষা করার জন্য কয়েক বছর অতিবাহিত করেন। তারপর একটি বিবৃতি প্রকাশের মাধ্যমে উপসংহারে পৌঁছান যে বোশ্চের হাতের চিহ্ন এখনও আসল তুলির টানে স্পষ্টভাবে শনাক্ত করা যাচ্ছে ।”

বলা বাহুল্য, “হারিয়ে যাওয়া” কাজটি আর স্টোরেজের মধ্যে নেই।এটি বোশ্চের নিজ শহর এস-হার্টোজেনবোশ্চে নুর্ডব্রাব্যান্টস মিউজিয়ামে প্রদর্শনের উদ্দেশে স্থানান্তর করা হয়।

‘এস-হার্টোজেনবোশ্চ’-এ প্রতিবছর জুন মাসে ডোমেল নদীতে ভাসমান একটি জাঁকজমকপূর্ণ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। শহরের অধিবাসীরা তাদের এই মহান পূর্বপুরুষের স্মৃতিকে উদযাপন করতে এটি করে থাকেন। হাজার হাজার দর্শক ভূমি থেকে এই প্রদর্শনী উপভোগ করেন।

তথ্য সুত্র

artnews.com

artsy.net

jstor.org

এ সম্পর্কিত খবর

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart