রেমব্রান্ট মারা গেছেন আজ থেকে ৩৫০ বছর আগে। কেন তিনি আজও আমাদের মনোযোগের লক্ষ্য হয়ে আছেন?
(রেমব্রান্ট হারমেনজেই ফান রেইন । (১৬০৬-১৬৬৯) ইতিহাসের সবসময়ের সবচেয়ে বিখ্যাত শিল্পীদের অন্যতম। ১৭ শতকে ওলন্দাজ স্বর্ণযুগের সময় তিনি চিত্রশিল্প ও ছাপচিত্রশিল্পে অসামান্য আবদান রাখেন। বিশেষ করে প্রতিকৃতি অঙ্কনের জন্য বিখ্যাত। মনে করা হয় গুণগতভাবে ও সংখ্যার দিক থেকে তাঁর আঁকা প্রতিকৃতিকে কেউ ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। স্ব-প্রতিকৃতির অঙ্কনের মধ্যে দিয়ে নিজের জীবনকে যেন বর্ণনা করে গেছেন রেমব্রান্ট। বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলিতে জনপ্রিয় ‘সেলফি’ ট্রেন্ডের জনক ধরা হয় রেমব্রান্টকে। তাঁর ছবিতে আলো আঁধারের উল্লেখযোগ্য ব্যবহার লক্ষ্যণীয়। পরবর্তীতে যা ‘রেমব্রান্ট লাইটিং’ হিসেবে পরিচিতি পায়। চিত্রশিল্প ছাড়িয়ে ‘রেমব্রান্ট লাইটিং’-এর ধারণা বিস্তার লাভ করে আলোকচিত্রশিল্প এবং চলচ্চিত্রেও। ফটোগ্রাফি ও প্রতিকৃতি ধারনের ক্ষেত্রে শিক্ষানবিশদের রেমব্রান্ট লাইটিং বিষয়ে পড়তে হয়। )
রেমব্রান্ট কিভাবে মারা গিয়েছিলেন? এটা একটা বিস্ময়কর ব্যাপার বটে, যাকে পৃথিবীর শিল্পকলা ইতিহাসের বিখ্যাত নামগুলির অন্যতম একজন হিসেবে ধরা হয়, তার মৃত্যু কিভাবে হয়েছিল আজও আমরা জানি না।
মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৬৩ বছর। কিন্তু ইতিহাসবিদদের কাছে অসুস্থতার কোন রেকর্ড নেই। কেউ কেউ হয়তো বলবেন, প্রচন্ড বেদনা নিয়ে তিনি মারা গেছেন,একমাত্র জীবিত সন্তান টাইটাসের মৃত্যুর বছরখানেক পরে।
যদিও রেমব্রান্ট তার জীবদ্দশায় ভুবনব্যাপী খ্যাতি উপভোগ করে যেতে পেরেছিলেন; কিন্তু জীবনের শেষ দিনগুলোতে সঙ্গতির চেয়ে খরচ করতেন বেশি, ফলে তিনি দেউলিয়া হিসেবে নথিভুক্ত হন। এরপর তাকে যৎসামান্য বৃত্তিতে জীবন যাপন করতে হয়। তার সমাধিও হয়েছিল ভাড়া করা অচেনা কোন কবরে। পরে, দেহাবংশ কবর থেকে তুলে ফেলা হয় এবং ধ্বংস করা হয়। এখন আর তার শেষ শয়নের কোন চিহ্ন নেই।
রেমব্রান্টের মৃত্যুর কথা বিবেচনার জন্য সামান্য একটু সময় নিতে হবে; কারণ এটি ঘটেছিল আজ থেকে ঠিক ৩৫০ বছর আগে ১৬৬৯ সালে। আর্মস্টারডাম থেকে পারস্য উপসাগর পর্যন্ত সারা পৃথিবী জুড়ে যাদুঘরগুলো তার অসাধারণ শৈল্পিক স্মৃতির স্মরণে প্রদর্শনীর মঞ্চায়ন করছে এবং এই সেরা শিল্পকর্ম থেকে আসা সুদূর অতীতের একটি জীবনকেও উপস্থাপন করছে।
একাধারে চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, ছাপচিত্রশিল্পী, নকশাকার, প্রেমিক, যোদ্ধা, প্রতিভাবান এবং দেনাদার–এতসব পরিচয় থাকার পরেও যদি এখন নতুন করে জিজ্ঞাসা করি, কে এই রেমব্রান্ট? তাহলে মোটেও অত্যুক্তি হবে না। ওলন্দাজ স্বর্ণ যুগের এই শিল্প-স্রষ্টার জীবন ও কর্মকে আমরা কিভাবে ব্যাখা করব? যিনি নিজের জীবদ্দশাতেই একই সাথে সমাদৃত হয়েছিলেন অত্যন্ত খ্যাতিমান হিসেবে আবার সমালোচিত হয়েছিলেন ‘সেকেলে’ বলে। এবং বার বার পুনরুজ্জীবিত হয়েছেন বিভিন্ন প্রজন্মের শিল্প-প্রেমিকদের কাছে, যারা তাঁর কাজের নতুন অর্থ খুঁজে পেয়েছিলো।
“খুব কমসংখ্যক মানুষই রেমব্রান্টের জীবনের গল্পটি জানে” বলেছেন, নেদারল্যান্ডের জাতীয় যাদুঘর রিকসমিউজিয়ামের পরিচালক টাকো ডিববিটস । যাদুঘরটি “অল দ্য রেমব্রান্ট’স” শিরোনামে একটি বিশেষ প্রদর্শনী উদযাপন করছে, যা শেষ হবে চলতি বছরের জুনের ১০ তারিখে। যাদুঘরটির কাছে সংগ্রহে থাকা রেমব্রান্টের স্মৃতিবিজড়িত প্রায় সবকিছু নিয়েই এই প্রদর্শনীর আয়োজন হয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে ২২টি পেইন্টিং ৬০টি ড্রয়িং ও ৩০০টি প্রিন্ট। প্রদর্শনীটির অনুষঙ্গ হিসেবে থাকছে রেমব্রান্টের একটি নতুন জীবনীগ্রন্থ জনাথন বিকারের ‘রেমব্রান্ট: এক বিদ্রোহের জীবন’।
“প্রত্যেক প্রজন্মের নিজস্ব রেমব্রান্ট আছে,” বলেছেন গ্রেগর জে এম ওয়েবার, যিনি রিকসমিউজিয়ামের ললিতকলা ও সজ্জাসংক্রান্ত শিল্প বিভাগের নেতৃত্ব দেন। “আশি বছর আগেও মানুষ রেমব্রান্টকে ভালোবাসতো ঠিক যেমন একজন বয়সী মানুষ তাঁর আত্মাকে ভালোবাসে। নিঃসঙ্গ এই মানুষটি শিল্পের শিখর বিন্দুতে পৌঁছে ছিল”। ওয়েবার আরো যোগ করেন, “এখন আমরা মনে করি, তিনি একজন বিদ্রোহীর চেয়ে কম বা বেশি ছিলেন, যিনি সর্বদা নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করেছেন। যিনি সর্বদা তাঁর কাজ করার পথ পরিবর্তন করেছেন। তিনি সংগ্রাম ও যুদ্ধ করেছিলেন নিজের বিরুদ্ধে এবং তার সময়ের মানদণ্ডের বিরুদ্ধেও ।”
“অল দ্য রেমব্র্যান্টস” কোন জীবনী বিষয়ক প্রদর্শনী নয়, তবে এটি নেদারল্যান্ডের লেইডেন শহরে এই মহান শিল্পীর কর্মজীবনের প্রাথমিক অবস্থা থেকে মৃত্যুর ঠিক আগের দিন পর্যন্ত অংকিত চিত্রগুলিকে অনুসরণ করে। এই প্রদর্শনীতে একটি একক কক্ষে সাজিয়ে রাখা শিল্পীর ৩০টি আত্মপ্রতিকৃতি আমাদের অনুমতি দেয় শিল্পীর চোখ দিয়ে শিল্পীকে দেখবার। যেভাবে সে কাল অতিক্রম করেছে, ২২ বছরের কোঁকড়া চুলের যুবক থেকে ৫৫ বছর বয়সী ধূসর ও চিন্তামগ্ন চাহনীর এক পুরুষ। এখানে দেখতে পাওয়া যায় প্রথম দিককার স্কেচ আর নকশাগুলির: সেই রাস্তার ভিক্ষুক, অর্ধ নগ্ন নারী আর হার্ডি-গার্ডি বাজিয়ে বাদকেরা পরবর্তীতে কিভাবে রূপান্তরিত হয়ে তাঁর বাইবেলীয় দৃশ্যাবলীকে চিত্রিত করে। এবং এখানে আরো তুলনা করা যাবে ধাতব পাতের উপর খোদাই করা সাধারণ মানুষের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রতিকৃতির সঙ্গে আর্মাস্টারডামের ধনী ব্যবসায়ী ও নাগরিকদের ফুল-স্কেলে আঁকা তৈলচিত্রের, যা করে তিনি তাঁর জীবিকা নির্বাহ করতেন।
তাঁর কর্মজীবনকে ছোট আকারে পরিবেশন করার মধ্য দিয়ে চলছে বিশ্বব্যাপী অন্যান্য প্রদর্শনীগুলি। তাঁর শুরুর দিককার কাজগুলির বিকাশের ধারা খুঁজে পাওয়া যাবে “ইয়ং রেমব্রান্ট ১৬২৪-১৬৩৪” এই শিরোনামের প্রদর্শনীতে। এটি চলছে নেদারল্যান্ডের লেইডেন শহরে লাক্ষেনল যাদুঘরে যা পরবর্তীতে প্রদর্শিত হবে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে অ্যাশমোলিয়ন যাদুঘরে। অন্যদিকে, তাঁর যুবক বয়সের সাফল্যকে অনুসন্ধান করা হয়েছে কানাডার অন্টারিওতে অ্যাগনেস ইথারিংটন আর্ট সেন্টারে “লাইডেন সার্কা ১৬৩০ রেমব্রান্ট এমার্জেস” প্রদর্শনীতে।
আর্মস্টারডামে তাঁর নিজ বাড়ি রেমব্রান্ট হাউস মিউজিয়ামে “রেমব্রান্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম: পরিবার, বন্ধু এবং পরিচিত”, এই শিরোনামে চলা প্রদর্শনী তাঁর সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জানা যাবে এবং নেদারল্যান্ডসের লিউউওয়ার্ডেনের ফ্রেইস মিউজিয়ামে “রেমব্রান্ট এবং সাসকিয়া: ওলন্দাজ স্বর্ণ যুগের প্রেম এবং বিয়ে” এই প্রদর্শনীতে শিল্পীর ব্যক্তিগত সংযোগ সম্পর্কে জানতে পারি। লন্ডনে ব্রিটিশ যাদুঘর, মাদ্রিদের থিসসেন-বোর্নেমিসা যাদুঘর, হেগ শহরের মৌরিসুয়েসিস এবং আবুধাবিতে সারা বছর জুড়ে প্রদর্শনী চলছে।
প্রায় ৫০ বছরের কর্মজীবনে রেমব্রান্টের চিত্তাকর্ষক উৎপাদনশীলতার কারণে একসঙ্গে এতগুলি প্রদর্শনী সম্ভব হচ্ছে, যার ফলে প্রায় ৩৫০ টি পেইন্টিং, ৩০০ টি এচিং বা ছাপচিত্র(তামার পাতের ওপর ছবি খোদাই করে সেটা থেকে ছাপচিত্রের কৌশল আবিষ্কার করেছিলেন তিনি।) এবং ১০০টিরও বেশি ড্রয়িং রয়েছে প্রদর্শনীগুলিতে।
ওলন্দাজ ওস্তাদ শিল্পীর সবচেয়ে বড় ব্যক্তিগত সংগ্রাহক হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত আমেরিকান ব্যবসায়ী থমাস এস কাপলান। এই রেমব্রান্ট প্রেমিক এখন আবুধাবির লুভর প্রদর্শনীতে তার লেইডেন কালেকশন নিয়ে গেছেন, সেখানে এক সাক্ষাৎকারে বলেন,”রেমব্রান্টকে দেখি একজন বিশ্বজনীন শিল্পী হিসেবে। তিনি শিল্পীদের জন্য স্বাধীনতার পথটি উন্মোচিত করে গেছেন, যাতে শিল্পীরা এক্সপ্রেসনিস্ট থেকে কিউবিস্ট হতে পারে, যা হয়ে উঠতে ইচ্ছে করে তাই হতে যেন পারে। পাশাপাশি, এমনকি তাদের নিজের চোখ দিয়ে দেখা সৌন্দর্য প্রকাশের ভংঙ্গিটি সমাজের সাথে অসংগতিপূর্ণও হয়”।
সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত বেশিরভাগ ইউরোপিয়ান শিল্পীরা কাজ করতেন ইটালিয় নবজাগরণের ঐতিহ্যে, বিশ্বাস করা হতো শিল্পীর কাজ শুধু প্রকৃতিকে অনুকরণ করা নয় বরং যেকোন বিষয়ের সবচেয়ে নান্দনিক প্রকাশের মধ্য দিয়ে তাকে আরো উন্নতস্তরে রূপ দেওয়া শিল্পীর কাজ। রেমব্রান্টের জীবনীকার মিঃ বিকার বলেছেন,”তিনি কোনভাবে আদর্শায়িত হওয়াকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন যার জন্য শিল্পের নিয়ম ভঙ্গ করার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। চিত্রাঙ্কন বা সুন্দরী যুবতী নারীর চিত্র তৈরি না করে সাধারণ নারী আর বলিরেখাযুক্ত স্থুল বয়স্কা নারীকে এঁকে দেখিয়ে ছিলেন”।
“শিল্পের সর্বপ্রথম ভক্তিহীন কাজ” এই বলে রেমব্রান্টকে বাতিল ঘোষণা করেছিলেন সপ্তদশ শতাব্দীর কবি নাট্যকার আন্দ্রেস পেলস।
“কেননা রেমব্রান্ট কোন গ্রীক সৌন্দর্যের দেবীকে তাঁর ছবির মডেল হিসেবে বাছাই না করে বরং ধোপানী অথবা হাতুড়ে চিকিৎসক, গোলাঘরের ভেজা খড়কুটো এসবকে করেছেন। শিথিল স্তন, কুঞ্চিত হাত, এমনকি পেটের উপর কাঁচুলির আর পায়ে মোজার চারপাশে ময়লা দাগ, এসব হয় নকল ছিল নয়তো প্রকৃতিবিরুদ্ধ ছিল” । মিঃ বিকারের লেখা জীবনী অনুযায়ী আন্দ্রেস এসব বিদ্রুপাত্মক কথা লিখে গেছেন ১৬৮১ সালে। মি. বিকারের মতে “এটিই রেমব্রেন্ডের স্থায়ী আবেদনের সঠিক উৎস। তিনি সত্যটি দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন এবং শিল্পের কোন আইন মেনে চলেননি, তিনি ঝুঁকি গ্রহণ করেছিলেন, এতে কেউ বিরক্তবোধ করছে কিনা এ নিয়ে তাঁর কোন উদ্বেগ ছিল না”।
রিকসমিউজিয়ামের মিঃ ওয়েবার এ সম্পর্কিত মতামতটি ব্যাখ্যা করেছিলেন এভাবে, ” রেমব্রান্ট তাঁর ছবির মডেলকে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষন করেছিলেন। এবং এ কারণেই এই নারী অথবা পুরুষ আপনার খুব আপনজন বলে অনুভব হয়, এমন মনে হয় যে সে এটা আমাদের জন্যই করেছিল”। রেমব্রান্টের প্রতিকৃতি সম্পর্কিত সত্য কেবল এটিই নয় আরও আছে, মিঃ ওয়েবার আরও যোগ করেন,” আপনি যদি তাঁর বাইবেলীয় দৃশ্যগুলো দেখেন সেখানেও তিনি ঠিক একই কাজ করেছেন। খ্রিষ্ট আর তাঁর শিষ্যদের চিত্র এমনভাবে বর্ণিত করেছেন যেন তারা প্রতিবেশি সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে দিয়ে মনে হবে একজন চিত্রশিল্পী যেন আপনার সাথে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলছে”।
মিউজিয়ামের পরিচালক মিঃ ডিববিটস বলেন, “রেমব্রান্ট শুধু মাত্র অঙ্কন সম্পর্কিত নয়, সে আপনাকে অনুভব করাবে, সেই মুহূর্তের জীবনটির কাছে নিয়ে যাবে। যেটা তাঁর পূর্ববর্তী শিল্পীদের তুলনায় সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী এক অভিযান। তিনি এটাকে স্মৃতির চিহ্ন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে যাননি, তিনি এর অভ্যন্তরীণ গল্পটি আপনাকে দিয়ে অনুভব করাবে। শেষ পর্যন্ত মানুষই তাঁর ঈশ্বর”।
যদি রেমব্রান্ট ধরণীতে উপনীত হয়ে থাকেন চিত্রকলার জন্যই, তাহলে এটা সম্ভব হয়েছিল কেননা তাঁর পূর্বপুরুষ তুলনামূলকভাবে নম্র ও স্বচ্ছল ছিলো। লেইডেনের একজন কারখানা মালিকের দশ সন্তানের মাঝে পঞ্চম ছিলেন। জেষ্ঠ্য সন্তান উত্তারাধিকার হিসেবে কারখানার মালিকানা পান, আর রেমব্রান্ট চিত্রকলায় শিক্ষানবিশ হন ১৫ বছর বয়সে। যেকোন প্রকারেই হোক তাঁর বাবা ছেলেকে ল্যাটিন স্কুলে পাঠিয়েছিলেন, পরে লিডেন বিশ্ববিদ্যালয়ে । রেমব্রান্টের শাস্ত্রীয় শিক্ষা ও জ্ঞান পরবর্তীতে প্রমাণিত হয়েছিল তাঁর শিল্পকর্মের মধ্য দিয়ে যেখানে তিনি বাইবেলে উল্লেখিত দৃশ্যের অন্বেষণ করেছেন। সেসময় নেদারল্যান্ডের সবচেয়ে প্রভাবশালী আর্ট ব্রোকার কনস্ট্যান্টিজেন হিউজেন্সের কাছে অসম্ভব প্রতিভাবান হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন। নিজের একটি পেইন্টিং স্টুডিও চালানোর ইচ্ছে নিয়ে ১৬৩১ এর শীতে আর্মাস্টারডামের উদ্দেশে যখন পাড়ি জমান বয়স তখন ২৬ বছর।
তিনি সেই আর্ট ডিলারের এক আত্মীয়া, ধনী রমনী সাসকিয়া ভ্যান ইউলেনবার্গকে বিয়ে করেছিলেন। তাদের চারটি সন্তান জন্মেছিল। যাদের মধ্যে একজনই কেবল বাল্যকাল পর্যন্ত টিকে থাকতে পেরেছিলো। এই পুত্র সন্তান টাইটাসের জন্মদানের মাসখানেকের মধ্যেই অসুস্থ সাসকিয়া মৃত্যুবরণ করে। আর এ ঘটনার ঠিক এক মাস পরেই রেমব্রান্টের হাত থেকে নিষ্ক্রান্ত হয় তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বাধিক পরিচিত কাজটি “দ্য নাইট ওয়াচ”।
তাঁর নারীদের প্রতি অনুরাগ আর অর্থের প্রতি অমিতব্যয়িতা এ দুটো স্বভাবের কথা জানা থাকার ফলে সাসকিয়া তাঁর সকল সম্পত্তি বন্ধকী করে শর্ত প্রযোজ্য করেন যে, রেমব্রান্ট পুনরায় বিয়ে করলে এই সম্পত্তি আর ভোগ দখল করতে পারবেন না। ফলে তাঁর পরবর্তী দুটো সম্পর্কই করুণ পরিণতির সমাপ্তি গ্রহণ করে – একটি পুত্রের প্রতিপালনকারী আয়া গেতের্জ ডিরিক্স’এর সঙ্গে ও আরেকটি তাঁর কন্যা কর্নেলিয়ার মা হেনরিক্রিক স্টোফেলস এর সঙ্গে। (রেমব্রান্ট স্ত্রীর দেয়া শর্তের কারণে হেনরিক্রিক স্টোফেলসকে কখনও বিয়ে করেননি)
রেমব্রান্ট হাউস যাদুঘরের পরিচালক লুইডেজ ডি কোয়েককেক বলেন, ” অনেক মানুষ এখনো রেমব্রান্টকে এক বিশেষ প্রতিভা হিসেবেই দেখে, অবশ্যই তিনি তা ছিলেন, কিন্তু একটি ব্যাপার আমরা লক্ষ্য করেছি আমাদের যাদুঘরে লোকজন জানতে চায় একজন ব্যক্তি রেমব্রান্টকে।”।
মিঃ ডিবিবিটস মনে করেন যে সারা বছর জুড়ে চলা এই সমস্ত প্রদর্শণীর মাধ্যমে মানুষও সেই একই ঘোরে আচ্ছন্ন হবে ছবি আঁকার সময় রেমব্রান্ট যে ঘোরে আচ্ছন্ন ছিলেন জীবনভর। জীবন যতো গড়িয়েছে এই আচ্ছন্নতাবোধও আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে, আরও বেশি উন্নত হয়েছে। ফলে আমরা তাঁর শেষদিককার প্রতিকৃতিগুলো আরও বেশি জবরদস্ত রূপে আবিষ্কার করি। এর কারণ আমাদের মনে হয় যেন আমরা সরাসরি ওই ব্যক্তিটির দিকে তাকিয়ে আছি। তাঁর কাজ মানবজাতি ও মানবতার উদ্দেশ্যে দেয়া এক শ্রদ্ধার্ঘ্য।
তথ্যসূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।
আর্টস বিভাগে প্রকাশিত বিপাশা চক্রবর্তীর আরও লেখা:
জীবন ও মৃত্যুর সঙ্গম: অর্ধনারীশ্বর অথবা তৃতীয় প্রকৃতি
সাম্প্রতিক বিশ্বসাহিত্য: আইনস্টাইন, শেক্সপিয়র, আঁদ্রে গ্লুক্সমাঁ, ফের্নান্দো ও বিয়োরো
সাম্প্রতিক বিশ্বসাহিত্য ও সংস্কৃতি
সাম্প্রতিক বিশ্বসাহিত্য ও সংস্কৃতি: স্রোতের বিরুদ্ধে স্নোডেন, অরুন্ধতী, কুসাক
সাম্প্রতিক বিশ্বসাহিত্য ও সংস্কৃতি: ভিক্টর হুগো ও টেনেসি উইলিয়াম
সাম্প্রতিক বিশ্বসাহিত্য: আরবমুখী ফরাসী লেখক ও মার্গারেটের গ্রাফিক-উপন্যাস
সাম্প্রতিক বিশ্বসাহিত্য: গত বছরের সেরা বইগুলো
সাম্প্রতিক বিশ্বসাহিত্য: নতুন বছরে নারীরাই রবে শীর্ষে
সাম্প্রতিক বিশ্বসাহিত্য ও সংস্কৃতি: নতুন এলিয়ট, ব্যাংকসির প্রতিবাদ ও তাতিয়ানার রসনা
সাম্প্রতিক বিশ্বসাহিত্য:চিরকালের শত শ্রেষ্ঠ
নারী দীপাবলী: তুমি হবে সে সবের জ্যোতি
সাম্প্রতিক বিশ্বসাহিত্য:চিরকালের শত শ্রেষ্ঠ ননফিকশন
সাম্প্রতিক বিশ্বসাহিত্য: যাদুবাস্তবতার শাহেনশাহ মার্কেসের মানসিক গ্রন্থাগার
সাম্প্রতিক বিশ্বসাহিত্য:ভাষারাজ্যের তীর্থযাত্রী ঝুম্পা লাহিড়ী ও টেন্টাকলের মার্গারেট এটউড
সাম্প্রতিক বিশ্বসাহিত্য: প্রত্যাখ্যাত রাউলিং ও পুনর্বাসনে লুইয এলিজাবেত ভিযে ল্য ব্রাঁ
সাম্প্রতিক বিশ্বসাহিত্য: রোবট লিখবে হাইব্রিড উপন্যাস?
সাম্প্রতিক শিল্পসাহিত্য: পানামা পেপার্স-এ চিত্রকলাও
সাম্প্রতিক বিশ্বসাহিত্য: বিজ্ঞানসচেতন শেক্সপিয়র
সাম্প্রতিক বিশ্বসাহিত্য: দ্য জাঙ্গল বুক-এর চোখধাঁধানো নতুন অলংকরণ
জাহা হাদিদ: আপোষহীন প্রতিভার অনন্য স্থাপত্য
সুর বাগিচার বুলবুলি, গান সায়রের মতি
আদিম লতাগুল্মময় শেকসপিয়রের নগ্ন প্রদর্শনী
ভিতরে বাইরে ছন্দোময় কবি মোহাম্মদ আলী
সাম্প্রতিক বিশ্বসাহিত্য: বিদায় রাবাসা, অজানা কাফকা ও শিল্পকর্মের উল্টোপিঠ
সাম্প্রতিক বিশ্বসাহিত্য ও সংস্কৃতি: বিদায় আব্বাস, বিদায় বনফয়
সাম্প্রতিক বিশ্বসাহিত্য: প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের সর্বশেষ উপন্যাস ‘দূর হ শয়তানের দল’
সাম্প্রতিক বিশ্বসাহিত্য ও সংস্কৃতি: নতুন তথ্যে আত্মঘাতী তিন খ্যাতিমান
সাম্প্রতিক বিশ্বসাহিত্য: নতুন হ্যারি পটার, পাঠের নতুন ধরন এবং ধনী লেখককুল
প্রত্যাখ্যাত ৮টি গবেষণার নোবেলজয়
ক্রিস্টোফার মার্লো শেক্সপিয়রের সহ-লেখক ছিলেন!
বুলবন ওসমানের সাক্ষাৎকার: কলকাতায় একবার বাঙালি মুসলিমরা হামলা করেছিল বাবাকে
কবি ইউসেফ কমুনিয়াকার কবিতা: মোকাবেলা
আন্তঃনাক্ষত্রিক সভ্যতার স্বপ্ন ও স্টিফেন হকিং-এর সেরা বইগুলো
অক্তাবিও পাস: আমি প্রেমে পড়ি আর ভারতে আমরা বিয়ে করি
বিশ শতকের বহুলপঠিত নারীবাদী কথাসাহিত্য