মায়া আবু আল-হায়াতের কবিতা

মায়া আবু আল-হায়াত বৈরুতে জন্মগ্রহণকারী ফিলিস্তিনি ঔপন্যাসিক, কবি, গল্পকার এবং অনুবাদক। তিনি তিনটি উপন্যাস এবং তিনটি কবিতা সংকলন প্রকাশ করেছেন। তার বইগুলো বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছে এবং তার কিছু গল্প বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। আবু আল-হায়াত একজন অভিনেত্রী হিসেবেও কাজ করেছেন। প্যালেস্টাইন রাইটিং ওয়ার্কশপ পরিচালনা করেছেন। আবু আল-হায়াত শিশু সাহিত্যে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেন, “ইফতাহ ইয়া সিমসিম” সহ শিশুদের জন্য টেলিভিশন অনুষ্ঠান রচনা এবং উপস্থাপনা করেন। এবং শিশু গল্প লেখার মাধ্যমে পরিচিতি পান। ব্যক্তিগত জীবন মায়া আবু আল-হায়াত ১৯৮০ সালে লেবাননের বৈরুতে জন্মগ্রহণ করেন, কিন্তু জর্ডানে বেড়ে ওঠেন। তার মা লেবানিজ এবং তার বাবা ফিলিস্তিনি। তিনি তার চাচীর কাছে বেড়ে ওঠেন। কিছু কাল তিনি তিউনিসে তার বাবার কাছে থাকেন। ২০০৩ সালে, নাবলুসের আন-নাজাহ ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি আম্মান, জর্ডান এবং তিউনিসিয়ায় বিভিন্ন সময় বাস করার পর পরিবারের সাথে ২০০৮ সালে জেরুজালেমে চলে আসেন। বর্তমানে স্বামী এবং তিন সন্তানের সাথে জেরুজালেমে বসবাস করছেন। কবিতাগুলো ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ করেছেন প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক বিপাশা চক্রবর্তী। বি. স.

হারাবার পথ

বাদ বাকি আপনাদের মতোই,

যদিও ভেবেছি আমি পালানোর কথা।

কিন্তু আমার আছে উড্ডয়ন ভীতি,

যানজটে পূর্ণ সব সেতুর ভীতি,

আর ভীতি রাস্তায় দুর্ঘটনার

আছে ভয় নতুন এক ভাষা শিক্ষারও।

আমার ভাবনা সটকে পরার,

ছোট্ট এক নিষ্ক্রমণের:

বাচ্চাগুলোকে স্যুটকেসে ঢুকানো

নতুন জায়গায় চলে যেতে।

আমাকে বিভ্রান্ত করে দিকবিদিক:

এ শহরে নেই কোনো বনভূমি,

নেই কোনো মরুভূমিও।

তোমার কি জানা আছে হারাবার পথ

যে-পথ হয় না শেষ মতৈক্যে এসে?

ভেবেছি বন্ধুত্ব করার কথা পশুদের সাথে,

আদুরে টাইপের, আমার সন্তানদের বৈদ্যুতিক

খেলনার বিকল্প রূপে।

কেউ কাউকে উৎসর্গ করার আগেই,

আমি হারিয়ে যাবার একটা জায়গা চাই।

আমার সন্তানরা বড় হবে,

তাদের প্রশ্ন দ্বিগুণ হবে ,

এবং আমি মিথ্যা বলি না,

কিন্তু শিক্ষকরা আমার কথাগুলি বিকৃত করে।

আমি বিদ্বেষ পোষণ করি না,

কিন্তু প্রতিবেশীরা সব সময়ই নাক গলায়।

আমি ভর্ৎসনা করি না, কিন্তু শত্রুরা হত্যা করে।

আমার সন্তানরা বড় হয়েছে

এবং এখনো কেউ চিন্তাও করেনি

সর্বশেষ সংবাদঘন্টা সম্প্রচারের

ধর্মীয় চ্যানেলগুলো বন্ধ করার

স্কুলের ছাদ ও দেয়ালগুলি সিলগালা করার

এবং নির্যাতন অবসানের।

আমি বলার সাহস করি না।

যা-কিছুই বলি তা ঘটে যায়।

আমি বলতে চাই না।

তারচেয়ে আমি বরং নিরুদ্দেশ হবো।

মিল

আমাকে একটা ব্যতিক্রম দেখাও,

হোক তা ন্যায়বিচার

ব্যাথা কিংবা ইতিহাসঃ

বিদ্বেষীর সাথে মিল বিদ্বেষীর,

ঘাতকের সঙ্গে ঘাতকের।

বিমান থেকে বোমা-বর্ষিত ভবনটিকে

মনে হয় উড়ছে।

গর্তগুলোর ধাঁধাঁয় মত্ত এক শিশুর সঙ্গে মিল আছে

ছিন্নভিন্ন অন্য কিছুর।

শোকাহত মায়ের সঙ্গে মিল

অপেক্ষমান অন্য মায়ের।

আমাকে একটা ব্যতিক্রম দেখাও,

ন্যায়বিচারের আশা ছেড়ে দেবার পর

তোমার জবানে: ন্যায়বিচারের মানে

বেঁচে থাকা সকল মানুষের অধিকার

হোক তার বাস পৃথিবীর ভুল কোন জায়গায়,

ক্ষতিগ্রস্থদের অধিকার,

গরিবের অধিকার।

ন্যায়বিচার হত্যাকারীর অজুহাত নয়

দুষ্টের ভর নয় কিংবা নয়

অন্যায়কারীর তরবারি।

একটা ব্যতিক্রম দেখাও

যাতে করে আমার শিশুদের তোমার হাতে তুলে দিতে পারি

আর যারা অন্য সবার মতো।

বাঁশি

আমার ঘাড়ে কি তুমি ছিদ্র দেখতে পাচ্ছ?

এখন আর মনে নেই বুলেট নাকি কথার কারণে

তবে আমি নিশ্চিত আমার ওষ্ঠাধর পেরিয়ে গিয়েছে এই ছিদ্র

আর বাঁশিটিকে তারা বাইরে রেখে গেছে।

যখনই তাকাই আমি অতীতের দিকে

অথবা অনাগত ভবিষ্যত পানে

তখনই শুনতে পাও ঝনঝন আওয়াজ।

আস্থা রাখি না অভিন্ন বিলাপে

প্রকাশ্যে প্রেমেও নয়

আমি ন্যায়বিচার নিয়ে অবিরাম সংলাপে বিশ্বাস করতে পারি না

দন্ডাদেশ সম্পর্কিত আলাপেও না

সামান্য পাপও যদি না করে থাক

তারপরও জানবো তুমি এক ভয়ানক পাপী

কিছু ব্যাপ্যার থাকে যা সত্য হতে পারে না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart